নিউইয়র্ক থেকে: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাংলাদেশি কমিউনিটি সামান্য হলেও প্রভাব রাখে। অতীতের কথা বাদ, অন্তত এ বছরের নির্বাচনে তা থাকবেই বলে বিশ্বাস এখানকার বাংলাদেশি অভিবাসীদের।
মিনহাজ আহমেদ নামে এক বাংলাদেশি এখানে দ্য অপটিমিস্ট নামের একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানালেন, ব্যালট পেপারেই বাংলা থাকবে, যেন বাংলাভাষাভাষীরা তাদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসুবিধায় না পড়েন।
মিনহাজ জানান, কেবল যে ব্যালট তাই নয়, এ বছর যারা ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন তাদের নিবন্ধন ফর্মটিও বাংলায় পূরণ করার সুযোগ ছিলো। আর নিবন্ধিত হওয়ার পর যে কার্ডটি তাদের দেওয়া হয়েছে তার মধ্যেও রয়েছে বাংলা লেখা।
এমনই একজন কার্ড হোল্ডার নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট পর্শিয়া সুলতানা বলেন, এখানে আসলে বাংলাদেশিরা ইংরেজি বুঝতে পারবে কি না- সে জন্য বাংলা ব্যবহার একটি ভালো কাজ হয়েছে, তেমন নয়। এখানে গর্বের বিষয় হচ্ছে কার্ডে নিজের মাতৃভাষার হরফ লেখা দেখতে পাচ্ছি আরও কিছু ভাষার সঙ্গে সেটি।
যুক্তরাষ্ট্রে শত জাতি-গোষ্ঠী, শত ভাষাভাষীর মানুষের বাস। এক নিউইয়র্কেই রয়েছে শত ভাষার ব্যবহার, তার মধ্য থেকে ব্যালটগুলোতে কিংবা রেজিস্ট্রশন ফর্মে বা ভোটার কার্ডে স্থান পাচ্ছে ছয়টি ভাষা, আর তার একটি বাংলা, এটা দেখে ভালো লাগে।
এখানে মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, পরপর কয়েক দফায় কুইন্স ডিস্ট্রিক্টের জুডিশিয়াল কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য মনজুর চৌধুরী বলেন, এটা একটা লড়াই ছিলো আমাদের। গত কয়েক বছর ধরে নানাভাবে লড়াই করে কুইন্স ডিস্ট্রিক্টে আমরা এই বাংলা অন্তর্ভূক্ত করাতে পেরেছি। এক্ষেত্রে কুইন্স ডিস্ট্রক্টের কাউন্সিলম্যান ড্যানিয়েল ড্রমের বিশেষ সহযোগিতা ও উৎসাহের কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রয়োজন যে নেই তাও নয়, বলে মনে করেন কমিউনিটির আরেক জনপ্রিয় মুখ আকবর হায়দর কিরন। তিনি বলেন, অনেক অভিবাসী বাংলাদেশি তাদের বাবা-মাকে এই দেশে নিয়ে এসেছেন। তারা ইংরেজি ব্যালটে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে নাও পারেন। সুতরাং বাংলা থাকলে তাদের জন্য সুবিধা হবে।
প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ব্যালটে বাংলার ব্যবহার এবারই প্রথম হতে যাচ্ছে জানিয়ে মনোয়ার হোসেন নামে আরেক বাংলাদেশি আমেরিকান বলেন, নিউইয়র্কেই কেবল নয়, লস এঞ্জেলস, ফ্লোরিডাসহ আরও কয়েকটি রাজ্যে এমন বাংলা ব্যালট, বাংলায় নিবন্ধন, বাংলায় ভোটার কার্ড থাকছে।
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বাংলাদেশি আমেরিকান জাকির খান মূলধারার রাজনীতিতেও যথেষ্ট সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করেন। নিজে কখনো প্রতিনিধিত্বের ভোটাভুটিতে সামিল না হলেও ব্রঙ্কসের স্থানীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব রয়েছে বলেই স্বীকৃত। জাকির খান জানান, এটা তাদের একটা দীর্ঘ সময়ের দাবি ছিলো। ২০১৩ সালে নিউইয়র্কের মেয়র ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় তাতে সফলতা আসে। সেবার থেকেই ভোটের বিভিন্ন নথিতে বাংলা ব্যবহৃত হতে থাকে।
কেবল যে ব্যালট বা নিবন্ধনে তাই নয়, ভোটের দিন থাকবে সেন্টারে সেন্টারে বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক। তারা ঘুরে ঘুরে সেবা দেবে অন্যান্য কমিউনিটির পাশাপাশি বাংলাদেশিদেরও।
এ বছর নিউইয়র্কেই এমন কয়েকশ বাংলাদেশি ভোটকর্মী এরই মধ্য তালিকাভূক্ত হয়েছেন এমন নির্বাচন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।
মিনহাজ আহমেদ জানান, এক সময় তিনি নিজে এমন স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন। বিষয়টি আনন্দের। তবে তখন বাংলাদেশিদের অন্তর্ভূক্তি বা অংশগ্রহণ ছিলো খুবই কম। এখন তা শতগুণে বেড়েছে। এটাও কম গর্বের নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে
আরও পড়ুন
*** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র্যালি রোববার
*** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক
***বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
*** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!
***অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
***প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে